এবেনথাল। পশ্চিম রোমানিয়ার মেহেন্দিতি কাউন্টিতে অবস্থিত একটি ছোট পাহাড়ি গ্রাম। চেক নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই পাহাড়ি জনপদ আর পাঁচটি পাহাড়ি গ্রামের মতোই নয়নাভিরাম।
তবে অন্যান্য গ্রামের সাথে এর প্রার্থক্য হলো- গত ত্রিশ বছরে কোনো দিন এই গ্রাম থেকে কোনো কিছু চুরি হয়নি। চুরি করবেই বা কে? চোরই যে নেই গ্রামে। ফলে সেখানে নেই কোনো থানা বা পুলিশ। নিকটবর্তী পুলিশ ক্যাম্পের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার।
মজার ব্যাপার হলো, এই গ্রামের রাস্তার দুপাশ দিয়ে লাইট পোস্ট কিংবা বাড়ির প্রাচীরের সাথে ছোট ছোট টাকার ব্যাগ ঝোলানো থাকে। তবে কেউ কোনো দিন ব্যাগগুলো চুরি করাতো দূরের কথা ছুঁয়েও দেখে না। এমনকি এই গ্রামের কোনো লোক অনুমতি ছাড়া অন্য কারো বাড়ির আঙ্গিনাতেও প্রবেশ করে না। তবে এই গ্রামের মানুষের এরকম সৎ হয়ে ওঠার পেছনের কাহিনি বেশ মজার। ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ইবিনথালের এক মাত্র রুটির দোকান। গ্রামের মানুষ পড়লো চরম বিপাকে। কারণ সপ্তাহে মাত্র দুদিন রুটির গাড়ি আসে। ফলে কখন রুটির গাড়ি আসে এই প্রতীক্ষায় দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হতে থাকে গ্রামের মানুষের।
এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে কেউ একদিন তার বাড়ির গেটে একটি ব্যাগে করে টাকা রেখে দেয়। রুটির গাড়ি এসে সেই ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে রুটি রেখে যায়। এরপর থেকে গ্রামের সবাই ওই পথ অবলম্বন শুরু করে। কেউ লাইট পোস্টে কেউ বা বাড়ির গেটে ব্যাগে করে রুটির দাম রেখে দেওয়া শুরু করল। গাড়ি এসে যার যার ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ রুটি রেখে দিয়ে চলে যায়। যেহেতু রুটি সকলের প্রয়োজন সেহেতু কেউ কোনোদিন অন্যের ব্যাগ থেকে টাকা বা রুটি চুরি করেনি। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থেকেই চালু হয়ে গেল চমৎকার একটি প্রথা।
এই প্রথা থেকেই গ্রামের মানুষের একে অন্যের সম্পদের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মে যায়। গ্রাম থেকে চুরিসহ যেকোনো অপরাধ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পুলিশ স্টেশন। স্থানীয় গীর্জার পাদ্রি ভ্যাকলাভ মাসেক রোমানিয়ান পত্রিকা এডিভেরালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তেরো বছর ধরে আমি এখানে পাদ্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কোনোদিন কোনো চুরি বা অন্য কোনো অপরাধের ঘটনা শুনিনি। আমাদের যদি কোনো কিছু প্রয়োজন হয় তবে সেটা আমরা প্রতিবেশীর কাছ থেকে চেয়ে নেই। সুতরাং চুরি করতে যাবো কেন?’